ঢাকা ০৬:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিষ্টি আলুতে পুষ্টির জোগান

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১৯:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • ১৪৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গরীবের পুষ্টির যোগানদাতা মিষ্টি আলুর আবাদ ও উৎপাদনে এবারো দক্ষিণাঞ্চল শীর্ষস্থান লাভ করেছে। মানবদেহে অধিক ক্যালরির উৎস মিষ্টি আলু স্বল্প ব্যয়ে দেশের অনগ্রসর মানুষের পুষ্টির ভালো যোগানদাতা বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। এ পুষ্টিকর খাবার সাধারণ মানুষের সারাদিনের পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে থাকে।

কৃষি বিজ্ঞানী ও পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, হলুদ ও রঙিন শাসযুক্ত মাত্র ১৩ গ্রাম মিষ্টি আলু একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের প্রতিদিনের ভিটামিন-এ’র চাহিদা পূরণে সক্ষম। মিষ্টি আলু শিশুদের রাতকানা রোগসহ যেকোন বয়সী মানুষের দৃষ্টি শক্তি স্বল্পতার আশঙ্কা থেকেও নিরাপদ রাখার সহায়ক খাদ্য।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)’র বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে অন্তত ১০টি উন্নত জাতের, উচ্চ ফলনশীল ও পুষ্টি সমৃদ্ধ মিষ্টি আলুর জাত উদ্ভাবন করেছেন। যার উৎপাদনও আমাদের সনাতন জাতগুলোর প্রায় তিন থেকে ৪ গুণ। মিষ্টি আলুর দেশি জাতগুলো থেকে হেক্টর প্রতি ১০ টনের মত আলু উৎপাদন হলেও ‘বারি’ উদ্ভাবিত ‘বারি মিষ্টি আলু-১ (তৃপ্তি), বারি মিষ্টি আলু-২ (কমলা), বারি মিষ্টি আলু-৩ (দৌলতপুরী), বারি মিষ্টি আলু-৪, বারি মিষ্টি আলু-৫, বারি মিষ্টি আলু-৬, বারি মিষ্টি আলু-৭, বারি মিষ্টি আলু-৮ ও বারি-মিষ্টি আলু-৯’ জাতগুলোর হেক্টর প্রতি উৎপাদন ৩০-৪০ টন পর্যন্ত। এসব মিষ্টি আলু সিদ্ধ করে বা পুড়িয়ে খাবারের বাইরেও জ্যাম, জেলী, চিপস, মিষ্টি ও হালুয়াসহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার তৈরি সম্ভব।
চলতি বছর দেশে প্রায় ৩৭ হাজার ৪শ’ হেক্টর জমিতে ৭ লক্ষাধিক টন মিষ্টি আলু উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও এর আবাদ অনায়াসেই ৫০ হাজার টনে উন্নীত করা সম্ভব। ফলে উৎপাদনও ১০ লাখ টন অতিক্রম করতে পারে। চলতি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ১২ হাজার ৫৮২ হেক্টরে মিষ্টি আলুর আবাদ লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল। উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে ২ লাখ ৪১ হাজার টনের কিছু বেশি। তবে নদ-নদী বেষ্টিত দক্ষিণাঞ্চলে মিষ্টি আলুর আবাদ দ্বিগুণ করা সম্ভব বলেও জানিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদরা।
উৎপাদনের দিক থেকে দেশে খাদ্য ফসলের মধ্যে মিষ্টি আলুর অবস্থান চতুর্থ। তবে উৎপাদন এলাকার বাইরে এ ফসলের এখনো তেমন প্রচলন নেই। এখনো দেশে মোট উৎপাদিত মিষ্টি আলুর প্রায় ৪০ ভাগ দক্ষিণাঞ্চলে আবাদ হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলার চরাঞ্চলে মিষ্টি আলুর আবাদ হয়ে আসছে সুদূর অতীতকাল থেকে। তবে ‘বারি’ উদ্ভাবিত উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল মিষ্টি আলুর আবাদ কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি। বারি উদ্ভাবিত এসব উন্নতজাতের মিষ্টি আলুর জাতের লতা বা বীজগাছ মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) ও তার মাঠ কর্মীদের খুব একটা আগ্রহী ভূমিকা নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে। অথচ চলতি মৌসুমেও যে পরিমান জমিতে মিষ্টি আলুর আবাদ হয়েছে, সেখানে উচ্চ ফলনশীল মিষ্টি আলুর আবাদ নিশ্চিত করতে পারলে দক্ষিণাঞ্চলেই উৎপাদন দ্বিগুণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।
মধ্য অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যভাগ পর্যন্ত দোআঁশ ও বেলে মাটিতে মিষ্টি আলু আবাদের উপযুক্ত সময়। পরিমিত পরিমাণ গোবর, টিএসপি, ইউরিয়া ও এমপি সার প্রয়োগের মাধ্যমে মিষ্টি আলুর অত্যন্ত ভালো ফলন পাওয়া যায়। জমির আর্দ্রতার ওপর নির্ভর করে প্রয়োজনে ২-৩টি সেচ প্রদান করতে হয়। দক্ষিণাঞ্চলের চর অঞ্চলের বেলে দোআঁশ মাটি মিষ্টি আলু আবাদের জন্য যথেষ্ট উৎকৃষ্ট। চরাঞ্চলে নভেম্বরের শেষভাগ পর্যন্ত মিষ্টি আলুর আবাদ সম্ভব।
বারি উদ্ভাবিত কমলা সুন্দরী, বারি মিষ্টি আলু-৪ ও ৫ এ প্রচুর পরিমানে ক্যারোটিন রয়েছে। যা ভিটিমিন-এ’র একটি ভালো উৎস। চলতি মৌসুমে সারা দেশে প্রায় ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে সাড়ে ৭ লক্ষাধিক টনের মত মিষ্টি আলু উৎপাদনের আশা করছে কৃষি মন্ত্রণালয় ও ডিএই। গত বছর দেশে প্রায় ৩৭ হাজার হেক্টরে প্রায় ৭ লাখ টন মিষ্টি আলু উৎপাদিত হয়। যার মধ্যে বরিশাল অঞ্চলেই উৎপাদন ছিল আড়ই লাখ টন। আগামী মাসেই বাজারে নতুন মিষ্টি আলু উঠতে শুরু করবে। প্রতি কেজি আলু ৩০-৪০ টাকা দরে বিক্রি হলেও মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা কখনোই গড়ে ১৫ টাকার বেশি দাম পায় না।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মিষ্টি আলুতে পুষ্টির জোগান

আপডেট টাইম : ১০:১৯:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গরীবের পুষ্টির যোগানদাতা মিষ্টি আলুর আবাদ ও উৎপাদনে এবারো দক্ষিণাঞ্চল শীর্ষস্থান লাভ করেছে। মানবদেহে অধিক ক্যালরির উৎস মিষ্টি আলু স্বল্প ব্যয়ে দেশের অনগ্রসর মানুষের পুষ্টির ভালো যোগানদাতা বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। এ পুষ্টিকর খাবার সাধারণ মানুষের সারাদিনের পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে থাকে।

কৃষি বিজ্ঞানী ও পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, হলুদ ও রঙিন শাসযুক্ত মাত্র ১৩ গ্রাম মিষ্টি আলু একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের প্রতিদিনের ভিটামিন-এ’র চাহিদা পূরণে সক্ষম। মিষ্টি আলু শিশুদের রাতকানা রোগসহ যেকোন বয়সী মানুষের দৃষ্টি শক্তি স্বল্পতার আশঙ্কা থেকেও নিরাপদ রাখার সহায়ক খাদ্য।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)’র বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে অন্তত ১০টি উন্নত জাতের, উচ্চ ফলনশীল ও পুষ্টি সমৃদ্ধ মিষ্টি আলুর জাত উদ্ভাবন করেছেন। যার উৎপাদনও আমাদের সনাতন জাতগুলোর প্রায় তিন থেকে ৪ গুণ। মিষ্টি আলুর দেশি জাতগুলো থেকে হেক্টর প্রতি ১০ টনের মত আলু উৎপাদন হলেও ‘বারি’ উদ্ভাবিত ‘বারি মিষ্টি আলু-১ (তৃপ্তি), বারি মিষ্টি আলু-২ (কমলা), বারি মিষ্টি আলু-৩ (দৌলতপুরী), বারি মিষ্টি আলু-৪, বারি মিষ্টি আলু-৫, বারি মিষ্টি আলু-৬, বারি মিষ্টি আলু-৭, বারি মিষ্টি আলু-৮ ও বারি-মিষ্টি আলু-৯’ জাতগুলোর হেক্টর প্রতি উৎপাদন ৩০-৪০ টন পর্যন্ত। এসব মিষ্টি আলু সিদ্ধ করে বা পুড়িয়ে খাবারের বাইরেও জ্যাম, জেলী, চিপস, মিষ্টি ও হালুয়াসহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার তৈরি সম্ভব।
চলতি বছর দেশে প্রায় ৩৭ হাজার ৪শ’ হেক্টর জমিতে ৭ লক্ষাধিক টন মিষ্টি আলু উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও এর আবাদ অনায়াসেই ৫০ হাজার টনে উন্নীত করা সম্ভব। ফলে উৎপাদনও ১০ লাখ টন অতিক্রম করতে পারে। চলতি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ১২ হাজার ৫৮২ হেক্টরে মিষ্টি আলুর আবাদ লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল। উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে ২ লাখ ৪১ হাজার টনের কিছু বেশি। তবে নদ-নদী বেষ্টিত দক্ষিণাঞ্চলে মিষ্টি আলুর আবাদ দ্বিগুণ করা সম্ভব বলেও জানিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদরা।
উৎপাদনের দিক থেকে দেশে খাদ্য ফসলের মধ্যে মিষ্টি আলুর অবস্থান চতুর্থ। তবে উৎপাদন এলাকার বাইরে এ ফসলের এখনো তেমন প্রচলন নেই। এখনো দেশে মোট উৎপাদিত মিষ্টি আলুর প্রায় ৪০ ভাগ দক্ষিণাঞ্চলে আবাদ হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলার চরাঞ্চলে মিষ্টি আলুর আবাদ হয়ে আসছে সুদূর অতীতকাল থেকে। তবে ‘বারি’ উদ্ভাবিত উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল মিষ্টি আলুর আবাদ কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি। বারি উদ্ভাবিত এসব উন্নতজাতের মিষ্টি আলুর জাতের লতা বা বীজগাছ মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) ও তার মাঠ কর্মীদের খুব একটা আগ্রহী ভূমিকা নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে। অথচ চলতি মৌসুমেও যে পরিমান জমিতে মিষ্টি আলুর আবাদ হয়েছে, সেখানে উচ্চ ফলনশীল মিষ্টি আলুর আবাদ নিশ্চিত করতে পারলে দক্ষিণাঞ্চলেই উৎপাদন দ্বিগুণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।
মধ্য অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যভাগ পর্যন্ত দোআঁশ ও বেলে মাটিতে মিষ্টি আলু আবাদের উপযুক্ত সময়। পরিমিত পরিমাণ গোবর, টিএসপি, ইউরিয়া ও এমপি সার প্রয়োগের মাধ্যমে মিষ্টি আলুর অত্যন্ত ভালো ফলন পাওয়া যায়। জমির আর্দ্রতার ওপর নির্ভর করে প্রয়োজনে ২-৩টি সেচ প্রদান করতে হয়। দক্ষিণাঞ্চলের চর অঞ্চলের বেলে দোআঁশ মাটি মিষ্টি আলু আবাদের জন্য যথেষ্ট উৎকৃষ্ট। চরাঞ্চলে নভেম্বরের শেষভাগ পর্যন্ত মিষ্টি আলুর আবাদ সম্ভব।
বারি উদ্ভাবিত কমলা সুন্দরী, বারি মিষ্টি আলু-৪ ও ৫ এ প্রচুর পরিমানে ক্যারোটিন রয়েছে। যা ভিটিমিন-এ’র একটি ভালো উৎস। চলতি মৌসুমে সারা দেশে প্রায় ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে সাড়ে ৭ লক্ষাধিক টনের মত মিষ্টি আলু উৎপাদনের আশা করছে কৃষি মন্ত্রণালয় ও ডিএই। গত বছর দেশে প্রায় ৩৭ হাজার হেক্টরে প্রায় ৭ লাখ টন মিষ্টি আলু উৎপাদিত হয়। যার মধ্যে বরিশাল অঞ্চলেই উৎপাদন ছিল আড়ই লাখ টন। আগামী মাসেই বাজারে নতুন মিষ্টি আলু উঠতে শুরু করবে। প্রতি কেজি আলু ৩০-৪০ টাকা দরে বিক্রি হলেও মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা কখনোই গড়ে ১৫ টাকার বেশি দাম পায় না।